ডারউইন এর ‘NATURAL SELECTION’ বুঝানোর ক্ষেত্রে অনেক সময় শিক্ষকেরা খুব
চমকপ্রদ এক গবেষণার কথা বলে থাকেন।ঊনবিংশ ও বিংশ শতাব্দী জুড়ে ব্যাপ্ত এই গবেষণা
ছিল এক বিশেষ প্রজাতির মথের উপর যার নাম ‘PEPPERED MOTH’।
মথ গুলোর গায়ে স্পট বা বিন্দু থাকার কারণে এই নামকরণ। (সংযুক্ত ১ম ছবি)।
কালো এবং সাদা এই দু’ধরণের রঙের এই প্রজাতির মধ্যে সাদাটির বিশেষ ক্যামফ্লেজ বা
ছদ্মবেশ ক্ষমতা আছে , এরা সহজেই গাছের উপর জমে থাকা LICHEN এর রঙের সাথে
নিজেকে মিশিয়ে ফেলতে পারে।এর ফলে তারা রক্ষা পায় শিকারীর হাত থেকে।
কিন্তু কালো মথ গুলোর যেন সহজে শিকারের হাতে ধরা পরে। এ কারণে কালো
মথদের সংখ্যা ১৮৪৮ সালের দিকে উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেতে থাকে।
ঠিক তখনই ইউরোপে ঘটে যাওয়া “INDUSTRIAL REVOLUTION” এর কারণে যান্ত্রিক সভ্যতার উত্থানের সাথে সাথে চরম
মাশুল দিতে হয় পৃথিবীর প্রকৃতি ও পরিবেশ কে। বায়ু দূষণ আর রাসায়নিক দূষণের মিলিত
প্রভাবে প্রকটভাবে দূষিত হতে থাকে পৃথিবী, যার ফল গিয়ে পরে ওই PEPPERED MOTH গুলোসহ অনেক
প্রানীর উপরে। তাদের আবাস বৃক্ষ গুলো এবং সাদা মথদের ছদ্মবেশে সাহায্য করা LICHEN গুলো অনেকাংশে
নষ্ট হয়ে গাছের রঙ কালচে হয়ে ওঠে।
কিছু অদ্ভুত বিষয় এ সময় লক্ষ্য করা যায়. কালো মথগুলোর
সংখ্যা আগে কমে গিয়েছিল, এখন আবাস পরিবর্তন হওয়ায় তাদের সংখ্যা আরও কমার কথা।
কিন্তু অদ্ভুত ভাবে দেখা গেল, ১৮৯০-১৯৫০ পর্যন্ত পাওয়া এই প্রজাতির মথদের ৯৮% ই
কালো মথগুলো। সাদাগুলো যেন বেমালুম গায়েব!!!!! তাহলে কি সাদা প্রজাতি উল্টো
বিলুপ্ত হয়ে গেল????? এই অদ্ভুত ব্যাপার কেন ঘটল?? কি তার কারণ??
বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন পরিবেশের এই পরিবর্তনের কারণে মথ
গুলোর এক ধরণের পরিবর্তন হয়েছে, যে কারণে সাদা গুলো টিকতে পারে নি,বিশেষ করে ‘লাইকেন’
গুলোর বিনষ্ট হওয়ার কারণ। কিন্তু লাইকেনের
উপর নির্ভরতা না থাকায় কালগুলো টিকে গিয়েছে গাছের রঙে মিশে। বিজ্ঞানীরা এই পরিবর্তনের
নাম দেন ‘INDUSTRIAL MELANISM’.
কিন্তু তাহলে তো এর বিপরীত টাও ঘটা সম্ভব। অর্থাৎ
বিশুদ্ধ পরিবেশ ফিরে আসলে সাদা মথের আধিক্য দেখা যাবে।
এর প্রমাণের জন্য বিজ্ঞানীদের অপেক্ষা করতে হয় ১৯৬০ অবধি।
ওই সময় পাশ হওয়া ‘AIR CLEAN ACT’ এর কারণে পরের বছর গুলোতে দূষণের মাত্রা
কমতে থাকে ধীরে ধীরে। এক সময় অনেকখানি বিশুদ্ধ হয় পরিবেশ। এবার বিজ্ঞানীদের
অপেক্ষা মথ গুলোর কি ঘটে দেখার জন্য। আসলেই কি সাদা মথ ফিরে আসবে???
আর তাই
যদি হয় তাহলে ডারউইন এর ‘NATURAL
SELECTION’ এর বড় একটা প্রমাণ পাওয়া যাবে।
সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে পাওয়া গেল
কাঙ্ক্ষিত ফল।
হ্যাঁ, আসলেই পরিবর্তন হচ্ছে কালো আর সাদা মথের পরিসংখ্যান।
বিশুদ্ধ পরিবেশে সাদা মথ কে ছদ্মবেশে সহায়তা করে শিকার এর হাত থেকে বাঁচানো LICHEN এর আবির্ভাব
এর সাথে সাথে সাদা মথও ফিরে এসেছে প্রকৃতিতে। আগের মতই কমেছে কালো মথের সংখ্যা।
বর্তমান এই
প্রজাতির ৯০%এর অধিক মথই সাদা মথ, যারা বিশুদ্ধ পরিবেশের সুবিধা গ্রহণ করে নিজেদের
খাপ খাওয়াতে পেরেছে। (সংযুক্ত ২য় চিত্রে কালো মথদের সংখ্যার হ্রাস সংক্রান্ত গ্রাফ)।
S.M.SHAFI
Dept Of Zoology,University Of Dhaka.
(edited by nazia)